এড

সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা | শিক্ষা বিডি

শিক্ষা বিডিঃ উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা-এর রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস ও গৌরবময় অতীত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ প্রতিষ্ঠান দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে এবং বিশেষ ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে অশেষ অবদান রেখে আসছে। এ মাদ্রাসা সর্বদা যুগের চাহিদা ও সময়ের দাবির সাথে সমন্বয় সাধন করে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে।





মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদ্রাসা যা ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা নামে অধিক খ্যাত। ১৭৮০ সালে বাংলার ফোর্ট উইলিয়ামের গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক কলকাতায় কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে আলিয়া মাদ্রাসা কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। যখন ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়, তখন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন খান বাহাদুর মাওলানা জিয়াউল হক, তিনিই এই মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ।

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা, ঢাকা দাপ্তরিক ভাবে মাদ্রাসা-ই-আলিয়া নামে পরিচিত। ১৭৮০ সালে বাংলার ফোর্ট উইলিয়ামের গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিসং কর্তৃক কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৭৮১ থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত আলিয়া মাদ্রাসা বোর্ড অব গভর্নরস’ দ্বারা এবং ১৮১৯ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ইংরেজ সেক্রেটারি ও মুসলমান সহকারী সেক্রেটারির অধীনে ‘বোর্ড অব গভর্নরস’ দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৮৫০ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের পদ সৃষ্টি হলে ড. এ. স্প্রেংগার মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৮৫০ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ইংরেজ কর্মকর্তাগণ এ পদ অলঙ্কৃত করেন। ১৮২৯ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় ইংরেজি বিভাগ খোলা হয়। ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৩৪ বছরে এ বিভাগে ১৭৮৭ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন।

৮৫৪ সালে মাদ্রাসায় একটি পৃথক ইনস্টিটিউট হিসেবে ইঙ্গ-ফারসি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ভর্তির সময় শরাফতনামা (উচ্চ বংশে জন্মের সনদপত্র)-র উপর জোর দেওয়া হতো। ইংরেজি এবং ফারসি ভাষায় শিক্ষাদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ইঙ্গ-ফারসি বিভাগের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলা। ইঙ্গ-ফারসি বিভাগ মুসলিম অভিজাতদের মধ্যে তেমন আগ্রহ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়। ১৮২১ সালে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মাদ্রাসায় প্রথাগত পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৮৫৪ সালের শিক্ষাসংক্রান্ত ‘ডেস্পাচ’-এ কলকাতা মাদ্রাসাকে প্রস্তাবিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসার ইঙ্গিত থাকলেও মাদ্রাসাটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়নি। ১৮৬৩ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় এফ.এ পর্যায়ের ক্লাস সংযোজিত হয়।

১৯০৭ সালে মাদ্রাসায় তিন বছর মেয়াদি কামিল কোর্স চালু হয়। ১৯২৭ সালে প্রথম মুসলিম ব্যক্তি খাজা কামালউদ্দীন আহমদ অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে মাদ্রাসাটিতে ইসলামী শিক্ষা বেগবান হয়, এবং এরপর থেকে মাদ্রাসায় মুসলিমদের প্রভাব তৈরি হতে থাকে।

ঢাকায় স্থানান্তর (১৯৪৭)

১৯৪৭ দেশ ভাগ হয়ে গেলে ভারত ও বাংলাদেশ আলাদা স্বতন্ত্র দেশে পরিণত হয়, ফলে অবধারিত ভাবে মাদ্রাসা-ই আলিয়াকে কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। এবং নামকরণ করা হয় মাদ্রাসা-ই আলিয়া, ঢাকা। ১৯৬০ সালে মাদ্রাসা ঢাকার লক্ষ্মীবাজার থেকে বখশীবাজারে স্থানান্তরিত হয়, লক্ষ্মীবাজারে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে নজরুল কলেজ)-এ মাদ্রাসার কার্যক্রম চলতে থাকে। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান ১৯৫৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকার বখশীবাজারে মাদ্রাসার চারতলাবিশিষ্ট নতুন ভবন ও ছাত্রাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন খান বাহাদুর মাওলানা জিয়াউল হক।

২০০৬ সালে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের অধিভুক্ত হয়। ২০১৬ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত হলে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থানান্তরিত হয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়।

ক্যাম্পাস

সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া, বকসীবাজার, ঢাকায় অবস্থিত। এই সরকারি মাদরাসার পশ্চিম দিকে "বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড" পূর্বে মাদরাসার ছাত্রদের আবাসিক হল আল্লামা কাশগরী (রহঃ) হল মাদ্রাসার আরেকটি হলের মধ্যে রয়েছে শহীদ ইব্রাহিম হল।সাথে রয়েছে ক্যান্টন, লাইব্রেরি,ল্যাব গবেষণাগার সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী

বর্তমানে মাদ্রাসায় প্রায় ১৫০০০ শিক্ষার্থী ও ১০০ জন শিক্ষক রয়েছেন। মাদ্রাসাটির রয়েছে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, কম্পিউটার ল্যাব, খেলারমাঠ এবং ছাত্রাবাস।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ